প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক লাক্ষাদ্বীপ সফরের পরে, মালদ্বীপের মন্ত্রীর একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী গত সপ্তাহে লাক্ষাদ্বীপ গিয়েছিলেন এবং তাঁর অভিজ্ঞতা X এ শেয়ার করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ যাওয়া ও লাক্ষাদ্বীপকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভারতের বিশিষ্টজনরা। লাক্ষাদ্বীপের পার্শ্ববর্তী দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের মন্ত্রীদের গলায় কিন্তু ভিন্ন সুর। তাদের মধ্যে সরকারের মন্ত্রী মারিয়াম শিউনা সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি কুরুচিকর বক্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী তার লাক্ষাদ্বীপ সফরের ছবি পোস্ট করার পরে X-এ এখন-মুছে ফেলা পোস্ট-এ প্রধানমন্ত্রী মোদিকে “ক্লাউন” এবং “পুতুল” বলে অভিহিত করেছেন। এই বক্তব্য মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পে দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পড়তে চলেছে। ‘বয়কট মালদ্বীপ’ এবং হোটেল বাতিলের কারণে মালদ্বীপের সাধারণ মানুষের ক্ষোভের সম্মুখীন হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার।

নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপকে পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তা ভাবনা কে কটাক্ষ করে জাহিদ হামেজ X -এ লিখছে
“পদক্ষেপটি দুর্দান্ত। আমাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ধারণাটি ভ্রম। আমরা যে পরিষেবা অফার করি তা তারা কিভাবে সরবরাহ করতে পারে। তারা কিভাবে এত পরিষ্কার হতে পারে? ঘর গুলির স্থায়ী গন্ধই সবচেয়ে বড় পতন হবে।”

সূত্র মারফত জানা গেছে এই ব্যক্তি ভারতীয় দূতাবাসের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে করা কুরুচি কর মন্তব্য ভালো চোখে দেখছে না ভারতের ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী গত তিন দিনে মালদ্বীপের ৮ হাজার হোটেল বুকিং ও ২৫০০ বিমান টিকিট ক্যানসেল করেছে ভারতীয় পর্যটকরা।

অক্ষয় কুমার, শচীন টেন্ডুলকার, ক্রিকেটার আকাশ চোপড়া, সালমান খান ও কঙ্গনা রানাওত এর মত সেলিব্রেটিরা প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয়দের বিরুদ্ধে করা বক্তব্যের বিরোধিতা করে মালদ্বীপের পরিবর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের মানুষকে উৎসাহিত করছেন।

অক্ষয় কুমার

শচীন টেন্ডুলকার

আকাশ চোপড়া

সালমান খান

কঙ্গনা রানাওত

বিশেষত মালদ্বীপের অর্থ ব্যবস্থা পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। ২০২৩ সালের (জুন মাস পর্যন্ত) ১,০০,৯১৫ জন ভারতীয় পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছেন। ২০২১ ও ২০২২ সালে মালদ্বীপে মোট পর্যটকের ২০% ভারতীয় পর্যটক।

স্পোর্টস ফিজিওথেরাপিস্ট ডঃ ফালাক জোশিপুরা, ২ ফেব্রুয়ারি তার জন্মদিনে মালদ্বীপে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে উদযাপনের জন্য অমায়া কুদা রাহ রিসর্ট প্রায় চূড়ান্তও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তিনি এখন ট্রিপ বাতিল করেছেন । তিনি মালদ্বীপের যুব বিষয়ক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ মাজুম মজিদের টুইট দেখেএই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন।

মালদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুজা চীনপন্থী। সরকারে আসার পর থেকেই তিনি ভারত বিরোধী মন্তব্য করতে শুরু করেন। তার প্রতিপক্ষ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহের নয়াদিল্লির সাথে সুসম্পর্ক ছিল এবং সোলিহের শাসনকালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অগ্রসর হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের পরে সেখানকার পর্যটনকে উন্নত করার জন্য ও দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের অত্যাধুনিক ও সুখকর সুবিধা দেওয়ার জন্য ইন্ডিয়ান হোটেল কোম্পানি ( IHCL ), ভারতের বৃহত্তম আতিথেয়তা সংস্থা, লাক্ষাদ্বীপের সুহেলি এবং কদমত দ্বীপে দুটি তাজ-ব্র্যান্ডের রিসর্ট তৈরী করার কথা ঘোষণা করেছে ৷ গ্রীনফিল্ড প্রকল্পগুলি ২০২৬ সালে চালু হবে। সুহেলির সৈকতে  তাজ হোটেলে ৬০টি বিচ ভিলা এবং ৫০টি ওয়াটার ভিলা সহ ১১০ টি কক্ষ থাকবে। কদমতের তাজ হোটেলেও ১১০ টি কক্ষ থাকবে। এতে ৭৫ টি বিচ ভিলা এবং ৩৫ টি ওয়াটার ভিলা থাকবে।

হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফর নিয়ে মন্তব্যের পর তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে মালদ্বীপ। বরখাস্ত হওয়া মন্ত্রীরা হলেন- মরিয়ম শিউনা, মালশা শরীফ ও মাহজুম মজিদ।

One thought on “৮ হাজার হোটেল বুকিং ক্যানসেল মালদ্বীপে। ভারতীয়দের অপমান মালদ্বীপের পর্যটনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *