বছরের শুরুতেই উদ্বোধন হচ্ছে রামমন্দির। ৫০০ বছরের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে ২২ শে জানুয়ারি। রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে সুবিশাল পরিকাঠামো তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র ও উত্তর প্রদেশ সরকার। ২০৪৭ সালের মধ্যে অযোধ্যা হয়ে উঠবে সনাতনের আধ্যাত্বিক পূর্ণভূমি ‘অযোধ্যাধাম’।
রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে অযোধ্যাকে সনাতন ধর্মের পুণ্যক্ষেত্রে পরিণত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুসলিমদের মক্কা বা খ্রিস্টানদের জেরুজালেমের মতো করে সনাতনের আধ্যাত্বিক রাজধানী হিসেবে ‘অযোধ্যাধাম’ কে গড়ে তোলা হবে। দেশ বিদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে অযোধ্যা হয়ে উঠবে ‘পুণ্যভূমি’।
পৃথিবীর পর্যটন মানচিত্রে অযোধ্যাকে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীর ব্যবস্থাপনায় ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১০ বছরে অযোধ্যায় ৮৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
দেশ ও বিদেশের পর্যটক ও দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য অযোধ্যাধাম জংশন রেলওয়ে স্টেশন ও মহর্ষি বাল্মিকী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও থাকার জন্য টু স্টার, থ্রি স্টার ও ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ করার জন্য জমি অধিগ্রহণ এর কাজ চলছে। কিছু হোটেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে।
অযোধ্যার প্রধান চারটি রাস্তা
১) রাম পথ, ২) জন্মভূমি পথ, ৩) ভক্তি পথ, ৪) ধর্ম পথ এর বিস্তারের কাজ চলছে। এছাড়াও শহরের মধ্যের সমস্ত রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। রাস্তার দুপাশে বাড়ির দেওয়ালে রামচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্থানে দ্বিতল ও ত্রিতল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে।
আটটি পর্যায়ে ডেভেলপমেন্ট
অযোধ্যা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তত্ত্বাবধানে আটটি পর্যায়ে তৈরি করা হচ্ছে অযোধ্যাধাম।
- ১) সাংস্কৃতিক অযোধ্যা
- ২) আধুনিক অযোধ্যা
- ৩) সুগম অযোধ্যা
- ৪) ভাবনাময় অযোধ্যা
- ৫) মনোরম অযোধ্যা
- ৬) স্বচ্ছ অযোদ্ধা
- ৭) আয়ুষ্মান অযোধ্যা
- ৮) সক্ষম অযোধ্যা
সমদা পক্ষী অভয়ারণ্য
শহরের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে পৌরাণিক কালের গাছ লাগানোর মধ্যে দিয়ে এলাকাকে পৌরাণিক কালে বিকশিত বৈদিক শহরের রুপ দেওয়া হবে। ১৬৩ একর ক্ষেত্রফলে বিস্তৃত সমদা পক্ষী অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেশ-বিদেশের পাখিরা আসতে শুরু করেছে।
লতামঙ্গেশকর চক
সরয়ু নদীর তীরে ভারতের মহান গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের স্মরণে তৈরি করা হয়েছে ‘লতামঙ্গেশকর চক’। যার উদ্বোধন করেছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই চকের বিশেষ আকর্ষণ হল একটি বিশাল বীণা। এই বীণাটি লম্বায় ৪০ ফুট এবং উচ্চতায় কুড়ি ফুট। এর ওজন ১৪ টন। সাত সুরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাতটি মিউজিকাল পিলার রয়েছে। লতা মঙ্গেশকরের ৯২ বছরের জীবন কালকে ৯২ টি সাদা মার্বেলের পদ্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এই বীনাটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে আনুমানিক ৭.৯ কোটি টাকা।
রামকথা সংগ্রালয় ও তুলসী স্মারক ভবন
আন্তর্জাতিক রামকথা সংগ্রালয় ও আটগ্যালারিটিকে নতুন রূপ দেওয়ার কাজ চলছে। অন্যদিকে তুলসী স্মারক ভবন তৈরি করা হচ্ছে যার মধ্যে দশ হাজার পুস্তকের একটি সংগ্রাহালয় ও ৭০০ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে।
প্রতিবছর দ্বীপ উৎসব পালিত হয় এই অযোধ্যায়। তার সাথে সাথে বিদ্যা কুন্ড এর মতো পৌরাণিক স্থানে মহাআরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গ্রীনফিল্ড টাউনশিপ ও বশিষ্ঠ কুঞ্জ আবাসিক প্রকল্প
অযোধ্যাকে আধুনিক রুপ দেওয়ার জন্য মূল শহরের পাশে একটি গ্রীনফিল্ড টাউনশিপ তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১২০০ একর এলাকায় টাউনশিপটি তৈরি করতে খরচ হবে ২১৮০ কোটি টাকা। টাউনশিপটি লখনউ-গোরখপুর মহাসড়কের উভয় পাশে ১৪০৭ একর জুড়ে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৪৪২ একর অতিরিক্ত সম্প্রসারণ করা হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে, মঠ এবং আশ্রমের জন্য ২৮ টি প্লট ঠিক করা হয়েছে, প্রতিটি প্লটের আয়তন ১৯৬৬ বর্গ মিটার থেকে ১০৪১৭ বর্গ মিটার পর্যন্ত। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ টাউনশিপটি বাস্তবায়িত হবে। এর সাথে তৈরি হবে ৩০০ কোটি টাকা ব্যায়ে বশিষ্ঠ কুঞ্জ আবাসিক প্রকল্প।
স্থপতিকারদের মতে ২১ শতকের অন্যতম আধুনিক শহরের আদলে তৈরি করা হবে অযোধ্যাকে। একদিকে ইতিহাস অন্যদিকে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটবে এই শহরে। এখানকার বর্তমান স্থায়ী বাসিন্দাদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রেখে তৈরি করা হবে আধুনিক পরিষেবা প্রদানকারী পরিকল্পনা। আগামী এক দশকের মধ্যে অযোধ্যা হবে পৃথিবীর প্রথম ১০ পর্যটন কেন্দ্রের একটি এবং আধ্যাত্মিক পর্যটন ক্ষেত্রের অন্যতম পীঠস্থান।