বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পুরী ঠাকুর মরণোত্তর ভারতরত্ন পাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি ভবন ঘোষণা করেছে।

রাষ্ট্রপতি ভবন ২০২৪ এর ভারতরত্ন প্রাপকের নাম ঘোষণা করেছে। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পুরী ঠাকুর মরণোত্তর ভারতরত্ন পাচ্ছেন। তিনি ছিলেন একাধারে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যদিকে বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক নেতা। কর্পুরী ঠাকুর কে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারে সম্মানিত করার কথা তাঁর ১০০ তম জন্মবার্ষিকীর একদিন আগে জানা যায় । বিহারের সমষ্টিপুরে জন্ম নেওয়া কর্পুরী ঠাকুর দুই মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

পিছিয়ে পড়া জাতিকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার জন্য ‘জননায়ক’ নামেও পরিচিত ছিলেন কর্পুরী ঠাকুর। কর্পুরী ঠাকুর ১৯২৪ সালের ২৪শে জানুয়ারী বিহারের সমষ্টিপুরের পিটৌঝিয়া (বর্তমানে কার্পুরিগ্রাম) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শ্রী গোকুল ঠাকুর এবং মাতার নাম শ্রীমতি রামদুলারী দেবী। তাঁর বাবা গ্রামের একজন প্রান্তিক কৃষক এবং পেশায় নাপিত হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ১৯৪০ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁকে ২৬ মাস কারাগারে থাকতে হয় ।

কর্পুরী ঠাকুর। ছবি- এক্স

স্বাধীনতার পর তিনি নিজের গ্রামে শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন। ১৯৫২ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে বিহার বিধানসভার সদস্য হন। তিনি উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি ডিসেম্বর ১৯৭০ থেকে জুন ১৯৭১ এবং জুন ১৯৭৭ থেকে এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

১৯৬৭ সালে যখন তিনি প্রথমবারের মতো উপ-মুখ্যমন্ত্রী হন, তখন তিনি ইংরেজির বদলে হিন্দিতে শিক্ষার ওপর জোর দেন । এ কারণে তিনি অনেক সমালোচিত হলেও সত্য হলো তিনি শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।

এই সময়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর পদও পান এবং তাঁর প্রচেষ্টায় মিশনারি স্কুলে হিন্দিতে পাঠদান শুরু হয়। অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র শিশুদের স্কুলে বিনা মূল্যে পঠনপাঠনের কাজও তিনি করেন। তিনি দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি তাঁর রাজ্যে ম্যাট্রিক পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার কথা ঘোষণা করেছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি রাজ্যের সমস্ত বিভাগে হিন্দিতে কাজ করা বাধ্যতামূলক করেছিলেন। শুধু তাই নয়, রাজ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য সমান বেতন কমিশন তিনিই প্রথম কার্যকর করেছিলেন। কার্পুরী ঠাকুর ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ সালে ৬৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

রাজনীতিতে এত দীর্ঘ পথ চলার পর তিনি যখন মারা গেলেন, তখন পরিবারের কাছে উইল করার মতো কোনো বাড়ি তাঁর নামে ছিল না । পাটনায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে তিনি এক ইঞ্চি জমিও যোগ করতে পারেননি। কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে যখন প্রতিদিন রাজনীতিবিদদের নাম উঠে আসছে, তখন বিশ্বাস করা কঠিন যে কর্পুরী ঠাকুরের মতো নেতাও ছিলেন। বিহারে এখনও তার সততার অনেক গল্প শুনতে পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার এক্স হ্যান্ডেল এ লিখেছেন “আমি আনন্দিত যে ভারত সরকার সামাজিক ন্যায়বিচারের আলোকবর্তিকা, মহান জন নায়ক কার্পুরী ঠাকুর জিকে ভারতরত্ন প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাও এমন সময়ে যখন আমরা তাঁর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছি……….।

Exit mobile version