বর্ধমান রেলওয়ে স্টেশনের ২নাম্বার প্ল্যাটফর্মের ৫৩ হাজার গ্যালন জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বিশাল জলাধার ভেঙে পড়লো নিচে। ঘটনায় প্লাটফর্মে থাকা প্রায় ৩০ জন যাত্রী ও ব্যবসায়ী গুরুতর জখম হয়েছেন। তাদের সকলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার দুপুর ১২:০৮ মিনিট নাগাদ আচমকাই এই জলাধারটি প্ল্যাটফর্মের শেডের ওপর ভেঙে পড়ে। দুমড়ে মুচড়ে যায় লোহার শেডের একটা অংশ। সেই সময় শেডের তলায় ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষা করছিল অনেক মানুষ। শেডের ভারী লোহার খাঁচার মধ্যে অনেকেই আটকে পড়ে। জল ট্যাঙ্কের লোহার ভেঙে যাওয়া অংশ ২ নম্বর লাইনের ওপর ছিটকে যায়। তার ধাক্কায় লাইনের উপর থাকা বড় বড় পাথরের টুকরো ছিটকে ১ নম্বর প্লাটফর্মে চলে আসে। সেই ছুটে আসা পাথরের টুকরায় অনেকে আহত হন। ঘটনার আকস্মিকতায় গোটা স্টেশন জুড়ে তুমুল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মানুষ আতঙ্কিত হয়ে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়। এখনও পর্যন্ত মোট আহতের সংখ্যা সঠিক ভাবে জানা যায়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে জোর কদমে কাজ করছেন আরপিএফ, জিআরপি, দমকল, রেলের আধিকারিক সহ রেলের ইঞ্জিনিয়াররা। বর্ধমান থানার একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই মুহূর্তে ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিতে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ন রূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গ্যাস কাটার দিয়ে সেডের লোহা কাটা শুরু হয়েছে।
স্টেশনের মধ্যে ব্যবসায়ী অনেকের বক্তব্য কিছুদিন ধরেই পুরনো ওই লোহার ট্যাংক থেকে ধীরে ধীরে জল গড়িয়ে পড়ছিল। বিষয়টি জানানো হয়েছিল রেলের কর্তাদের। রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানা গেছে এ বিষয়ে তারা কোন অভিযোগ পাননি।
স্টেশন সূত্রে খবর, ১৩৩ বছরের পুরনো ওই জলের ট্যাঙ্কটি ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে তৈরি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, কী কারণে ট্যাঙ্কে বিপর্যয় ঘটল তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে রেলের প্রবীণ তিন আধিকারিককে।
এর আগে ২০২০ সালে এই বর্ধমান রেল স্টেশনে বাইরের দিকে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল একটি পুরনো বারান্দা। এতে দু’জন আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার পর স্টেশনের সামগ্রিক রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার জলের ট্যাঙ্ক আচমকা ভেঙে পড়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন এতদিন আগের তৈরি করা জলের ট্যাংকে প্রতিবছর রংয়ের প্রলেপ দিলেও তার ভেতরের কাঠামোর কেন পর্যালোচনা করা হয়নি ?