তুঙ্গে ভারত-মালদ্বীপ বিতর্ক । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাক্ষাদ্বীপে যেতেই গায়ে ফোস্কা পড়েছে মালদ্বীপের। ভারত ও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন মালদ্বীপের নেতা-মন্ত্রীরা। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও। সমন পাঠানো হয়েছে মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতকে। জবাব দিয়েছে ভারতের সেলিব্রেটি থেকে আমজনতা। উঠেছে মালদ্বীপ বয়কটের ডাক। অনেক ট্রাভেল ওয়েবসাইট মালদ্বীপের বুকিং বাতিল করে দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম EaseMy Trip। বুকিং বাতিল হতেই বেকায়দায় পড়েছে মালদ্বীপ। ভারতের পর্যটকরা মুখ ফেরানোয় এবার চিনের কাছে হাত পেতেছে তারা।
ভারতীয়দের দ্বারা মালদ্বীপ বয়কট করার যে প্রবণতা চলছে তা মালদ্বীপের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ভারতীয়রা এখনো পর্যন্ত ১৫০০০ হোটেল বুকিং সেনসেল করেছে। মালদ্বীপ সফর এবং ভ্রমণ সংস্থা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের কারণে ভারতবাসীর কাছে “আন্তরিক ক্ষমা” চেয়েছে।
এর সাথে তারা EaseMyTrip এর CEO-কে ফ্লাইট বুকিং পুনরায় চালু করার জন্যও অনুরোধ করেছে।
সংস্থাটি বলেছে যে পর্যটন মালদ্বীপের প্রাণশক্তি, যা তাদের জিডিপির দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং প্রায় ৪৪,০০০ মালদ্বীপবাসীকে জীবিকা প্রদান করে।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মুইজু তাঁর নির্বাচনী প্রচারে INDIA-OUT এর স্লোগান দেন । তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরই মালদ্বীপ সরকার ভারত বিদ্বেষী পদক্ষেপ করতে শুরু করে। চীন ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই তার এই ভারত বিদ্বেষী মনোভাব। তার নির্বাচনী প্রচারে ভারতবর্ষ ও নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে বিভিন্ন অপমানজনক বক্তব্য ও কার্টুন কে তুলে ধরা হয়েছিল।
বর্তমান ভারত-মালদ্বীপ বিতর্কে ভারতীয়দের কঠিন মনোভাবে (#বয়কটমালদ্বীপ) পিছু হটতে বাধ্য করেছে মালদ্বীপকে। আজ ভারতবাসীর প্রত্যক্ষ বিরোধিতায় মালদ্বীপের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। ভারতবাসীর গলায় এখন MALDIVES OUT।
ভারত এর আগে মালদ্বীপকে বিভিন্ন সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। কঠিন সময় একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। তৈরি হয়েছিল ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে এক নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
ভারত কর্তৃক মালদ্বীপকে করা সাহায্যের ৪ টি উদাহরণ
অপারেশন ক্যাকটাস
১৯৮৮ সালে, মালদ্বীপ সরকারের উপর করা ভারতের উপকার প্রতিবেশী দেশটির কখনও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ১৯৮৮ সালের ৩রা নভেম্বর অনুপ্রবেশকারীরা মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে হামলা চালায়। অনুপ্রবেশকারীদের পরিকল্পনা ছিল মালদ্বীপের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মামুন আব্দুল গাইয়ুমকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে গাইয়ুমকে সুরক্ষিত স্থানে আত্মগোপন করে থাকতে হয়। এরপর গাইয়ুম অনেক দেশের কাছে সাহায্য চাইলেও কোনো দেশ তাঁকে সাহায্য করেনি । এমন পরিস্থিতিতে মালদ্বীপের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ভারত।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মালদ্বীপকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দল মালদ্বীপে পাঠানো হয়েছিল । এরপর ভারতের মাত্র ১৫০ জন কমান্ডো ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেঁচে যায় মালদ্বীপের সরকার।
অপারেশন সি ওয়েভস
২০০৪ সালের শেষের দিকে, একটি সামুদ্রিক ভূমিকম্পে মালদ্বীপের উপকূল ধ্বংস হয়ে যায় । সেই সময়ে ভারত মালদ্বীপকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং ‘অপারেশন সি ওয়েভস’ শুরু করে। ভারত মালদ্বীপকে হরেক রকমের ত্রাণসামগ্রী দিয়ে সেসময় সাহায্য করে। হেলিকপ্টারের সাহায্যে লোকজনকে উদ্ধার করা হয়। শুধু তাই নয়, আর্থিক সংকটের মুখে থাকা মালদ্বীপকে ভারত তৎক্ষণাৎ ১০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলো। এর পরেও ভারত কোটি কোটি টাকার সাহায্য দিয়েছে মালদ্বীপকে।
অপারেশন নীড়
৪ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪-এ, মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে জলের RO প্ল্যান্ট ভেঙে যাওয়ার ফলে পানীয় জলের সংকট দেখা দেয়। পুরো শহরে প্রতিদিন ১০০ টন জলের প্রয়োজন থাকলেও এক ফোঁটা জলের জন্য পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মালদ্বীপ ভারত সরকারের কাছে সাহায্য চায়। ভারত ‘অপারেশন নীড়’ এর মাধ্যমে দিল্লি থেকে আরাককোনামে এবং সেখান থেকে মালেতে প্যাকেটজাত জল পাঠায়। সেনাবাহিনী ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিমানের মাধ্যমে ৩৭৪ টন পানীয় জল পৌঁছে দেয়।
করোনায় সময় ডাক্তার ও ভ্যাকসিন পাঠানো
২০২০ সালে করোনার সময় ভারত মালদ্বীপের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে একটি বড় মেডিকেল টিম পাঠিয়েছিল মালদ্বীপে পাঠায় । শুধু তাই নয়, ভারত মালদ্বীপে প্রচুর সংখ্যক ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়।