প্রয়াত হলেন ‘নেহেরুর বউ’ বলে খ্যাত বুধনি মেঝান। শুক্রবার রাতে পাঞ্চেতের স্থানীয় ডিভিসির আবাসনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আজ তার অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

১৯৫৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ডিভিসি-র পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনে এসেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। নেহেরুর পরামর্শে ঠিক হয় একজন আদিবাসী মহিলাকে দিয়ে পাঞ্চেতের উদ্বোধন করা হবে। ডিভিসির অধিকারীরা ঠিক করে ১৫ বছর বয়সী আদিবাসী মেয়ে বুধনি মেঝান কে । তাঁর হাত দিয়ে জওহরলাল নেহেরুর উপস্থিতিতে পাঞ্চেত ড্যাম এর সুইচ টেপে বুদনি। শুরু হয় পাঞ্চেত ড্যাম।

ডিভিসির অধিকারীদের কথা মতো অনুষ্ঠান স্থলে ডিভিসির পক্ষ থেকে জওহরলাল নেহেরুকে মালা পরিয়েছিলেন বুধনি মেঝান। জহরলাল নেহেরু মজা করে সেই মালা নিজের গালা থেকে খুলে পরিয়ে দিয়েছিলেন বুধনি মেঝানকে। বিপদ হলো এখানেই।

অনুষ্ঠান শেষে বুদনি বাড়ি ফিরলে আদিবাসী পাড়ায় সালিসি সভা বসে। সভায় ঠিক হয় যেহেতু বুদনি সাদা চামড়ার পর পুরুষের গলায় মালা পড়িয়েছে তাই তাকে আদিবাসী সমাজ থেকে বারকরে দেওয়া হবে। একজন ১৫ বছরের মেয়ে বুঝে উঠতে পারলো না কি দোষে সে সমাজচ্যুত হলো। সেতো ওই ডিভিসির বাবুদের কথা রাখতে প্রধানমন্ত্রীর গলায় মালা পড়িয়েছিল।

‘নেহেরুর বউ’ নামে তাঁকে ডাকতে শুরু করেন আদিবাসী গ্রামের অনেকেই এবং পরবর্তীতে গ্রাম থেকেও বের করে দেওয়া হয় তাঁকে। এর পর কেটে যায় অনেক গুলো বছর।

আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন রাজীব গান্ধী। তখন আসানসোলের এমপি আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় এই বুধনি মেঝেনের কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে । রাজীব গান্ধীর উদ্যোগেই ডিভিসি কর্তৃপক্ষ খুঁজে বার করেন বুধনিকে ও ডিভিসিতে চাকরিও দেওয়া হয়। তারপর থেকেই পাঞ্চেতে ডিভিসির আবাসনে থাকতেন তথাকথিত ‘নেহেরুর বউ’ বুদনি মেঝান ।

বুদনি কোনো দিন তাঁর সমাজে ফিরে যেতে চাননি। আবাসনে সহকর্মী আর প্রতিবেশীরাই তাঁর কাছে আপনজন হয়ে ওঠে। অবসরের পরেও থাকতেন ডিভিসির আবাসনেই।

শুক্রবার তাঁর মৃত্যুর খবর ছাড়িয়ে পরতেই শোকের ছায়া নামে পাঞ্চেতে। ডিভিসির পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হয় বুধনি মেঝানকে । মালা দেওয়া হয় তাঁর মরদেহে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও এদিন সম্মান জানানো হয় বুধনিকে। দীর্ঘ ৬৪ বছর তথাকথিত ‘নেহেরুর বউ’ আখ্যা নিয়ে আনুমানিক ৭৯ বছর বয়সে ‘সাপ মুক্ত’ হলেন বুদনি মেঝান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *