জগন্নাথ মন্দির করিডোর উন্নয়ন প্রকল্প বা পুরী হেরিটেজ করিডোর আগামী বছরের ১৭ই জানুয়ারী ভক্তদের জন্য উৎসর্গ করা হবে।
পুরীর আইকনিক জগন্নাথ মন্দিরের পরিধির সৌন্দর্যায়নের জন্য ৯৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত প্রকল্প শ্রীমন্দির পরিক্রমা ।

“পরিক্রমা প্রকল্পটির কাজ মোটামুটি ভাবে শেষের দিকে। প্রকাল্পটি ১৭ই জানুয়ারী, ২০২৪ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। সেই দিন একটি পূজা ও যজ্ঞ করা হবে।” বলেছেন মন্দিরের ধর্মীয় প্রধান ও শ্রী জগন্নাথ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি গজপতি।
শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের প্রশাসনিক প্রধান প্রশাসক রঞ্জন কুমার দাস বলেছেন যে ১৭ই জানুয়ারী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ভারত এবং বিদেশের ভক্তদের উপস্থিতিতে বিশাল আকারে হবে।
“যারা দশ বছর আগে পুরীতে এসেছিলেন তারা এখন বিশাল পার্থক্য লক্ষ্য করবেন। আমি নিশ্চিত যে প্রকল্পের উদ্বোধনের পর পুরী দর্শন করার সময় ভক্তরা একটি মহাজাগতিক অনুভূতি পাবেন,” বলেন দাস।
করিডোরটির নির্মাণ শেষ হলে ৬০০০ দর্শণার্থী এক সঙ্গে সারিবদ্ধ ভাবে লাইনে দাঁড়াতে পারবেন তার ব্যবস্থাপনা থাকবে। ব্যাগেজ স্ক্রীনিং সুবিধা, প্রায় ৪০০০ পরিবারের জিনিসপত্র রাখার জন্য ক্লোকরুম, পানীয় জল ও টয়লেটের সুবিধা, হাত/পা ধোয়ার সুবিধা, তথ্যকেন্দ্র -সহ সমস্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। দান কিয়স্ক, ছায়া ও বিশ্রামের জন্য আশ্রয় মণ্ডপ, মাল্টি-লেভেল কার পার্কিং, পুলিশ ও ফায়ারের জরুরি যানবাহন রাখার জায়গা , একটি সমন্বিত কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং স্যুভেনির শপ, ডেডিকেটেড শাটল কাম ইমার্জেন্সি লেন থাকছে।

ওড়িশা সরকারের আধিকারিকরা বলেছেন যে ভারতের বাকি ধাম গুলিতে পরিক্রমা মার্গ থাকলেও পুরীতে কোনো পরিক্রমা মার্গ ছিল না, তাই বিশেষ ভাবে প্রয়োজন ছিল এই পরিক্রমা প্রকল্পটির।
মন্দিরের আধিকারিকরা অবশ্য জানিয়েছেন যে ১.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৬০ মিটার চওড়া ‘শ্রী সেতু’ ওড়িশার প্রথম ট্রাম্পেট সেতু – যা ভুবনেশ্বর এবং ব্রহ্মগিরি থেকে আগত গাড়িগুলিকে মন্দিরের কাছে জগন্নাথ বল্লভ পার্কিং স্পটে পৌঁছে দেবে।
“পুরী হল ওড়িশার ধর্মীয় রাজধানী। এবং প্রতিদিন প্রায় ৪০,০০০ জন পর্যটক আসেন যারা ভগবান শ্রীজগন্নাথের দর্শন করেন। মন্দিরের চারপাশের এলাকা পরিষ্কার করার প্রয়োজন ছিল। অবৈধ নির্মাণ এবং মট দ্বারা আবদ্ধ হয়ে মন্দিরের পরিধিটি অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল।” দাস বলেছিলেন।
মন্দিরের প্রকল্প ছাড়াও, ওড়িশা সরকার হেরিটেজ অ্যান্ড আর্কিটেকচারের উন্নয়ন (ABADHA) প্রকল্পের অধীনে আরও ৩৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করছে পুরীর পরিকাঠামো পরিবর্তনের জন্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ৷

পুরী হেরিটেজ করিডোর প্রকল্প কি?
- এটি জগন্নাথ মন্দির সহ একটি আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান তৈরি করার জন্য পুরিতে ওড়িশা সরকারের একটি পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প। ২০১৬ সালে এটির প্ল্যান করা হলেও প্রকল্পটি ডিসেম্বর ২০১৯ এ উন্মোচন করা হয় ।
- প্রকল্পটির মূল কাজ হল, শ্রী জগন্নাথ হেরিটেজ করিডোর (SJHC) বা শ্রী মন্দিরা পরিক্রমা প্রকল্প ও মন্দিরের চারপাশের এলাকাকে সংস্কার ও সুন্দর্যায়ন করা।
- প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসন (এসজেটিএ) বিল্ডিং পুনঃউন্নয়ন, একটি ৬০০ ক্ষমতার শ্রীমন্দির অভ্যর্থনা কেন্দ্র, পুরী লেক, মুসা নদী পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা ইত্যাদি।
- ওড়িশা সরকার মন্দিরের আশেপাশের এলাকার পুনর্গঠনের জন্য তিনটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজ করছে ১) মন্দিরের নিরাপত্তা, ২) ভক্তদের নিরাপত্তা, ৩) ভক্তদের জন্য একটি ধর্মীয় পরিবেশ তৈরি করা।
জগন্নাথ মন্দিরের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
- মন্দিরটি ১২ শতকে পূর্ব গঙ্গা রাজবংশের রাজা অনতবর্মন দেব দ্বারা নির্মিত বলে মনে করা হয়।
- জগন্নাথ পুরীর মন্দিরকে ‘ইয়ামানিকা তীর্থ’ বলা হয় যেখানে হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, ভগবান জগন্নাথের উপস্থিতির কারণে পুরীতে মৃত্যুর দেবতা ‘যমের’ শক্তি শূন্য ।
- এই মন্দিরটিকে “সাদা প্যাগোডা” বলা হত এবং এটি চরধাম তীর্থস্থানগুলির একটি অংশ (বদ্রীনাথ, দ্বারকা, পুরী, রামেশ্বরম)।
- মন্দিরের চারটি ফটক রয়েছে- পূর্ব দিকের ‘সিংহদ্বার’ যেটি প্রধান ফটক। যেখানে দুটি ক্রুচিং সিংহ রয়েছে। দক্ষিণে ‘অশ্বদ্বার’। পশ্চিমে ‘ব্যাঘরা দ্বার’ এবং উত্তরে ‘হাস্তিদ্বার’। প্রবেশদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অরুণা স্তম্ভ বা সূর্যস্তম্ভ , যা মূলত কোনার্কের সূর্য মন্দিরে ছিল।
ওড়িশার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ
- কোনার্ক সূর্য মন্দির ( ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট )
- লিঙ্গরাজ মন্দির
- তারা তারিণী মন্দির
- উদয়গিরি ও খন্ডগিরি গুহা