কাতার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আটজন প্রাক্তন ভারতীয় নৌসেনা কর্মীকে মুক্তি দিয়েছে। এটি ভারতের একটি বড় কূটনৈতিক জয।

পররাষ্ট্র মন্ত্রক (এমইএ) সোমবারের সকালে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে এই খবরকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে যে প্রাক্তন ভারতীয় নৌবাহিনীর আটজন কর্মীর মধ্যে যে সাতজন দাহরা গ্লোবাল কোম্পানির জন্য কাজ করতেন তাঁরা কাতার থেকে ভারতে ফিরে এসেছেন।

“কাতারে আটক দাহরা গ্লোবাল কোম্পানিতে কর্মরত আট ভারতীয় নাগরিকের মুক্তিকে ভারত সরকার স্বাগত জানায়। তাদের আটজনের মধ্যে সাতজন ভারতে ফিরে এসেছেন। কাতারের আমিরের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।” এমইএ একটি বিবৃতিতে বলেছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে, কাতারের একটি আদালত দাহরা গ্লোবাল মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আট প্রাক্তন ভারতীয় নৌসেনার কর্মীর মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাহার করে। মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে তাঁদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কাতারের আদালত প্রাক্তন নৌবাহিনীর কর্মীদের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের দায়ের করা আপিল গ্রহণ করে এই নির্দেশ দেয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুবাইতে COP28 শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সাথে সাক্ষাতের কয়েক সপ্তাহ পরে এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটি হয়েছিল।

কাতারে আটক ভারতীয় নৌবাহিনীর আট কর্মকর্তা হলেন- ক্যাপ্টেন নভতেজ সিং গিল, ক্যাপ্টেন বীরেন্দ্র কুমার ভার্মা, ক্যাপ্টেন সৌরভ বশিষ্ঠ, কমান্ডার অমিত নাগপাল, কমান্ডার পূর্ণেন্দু তিওয়ারি, কমান্ডার সুগুনাকর পাকালা, কমান্ডার সঞ্জীব গুপ্তা এবং নাবিক রাগেশ।

প্রাক্তন নৌবাহিনীর কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান

‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানের মধ্যে, ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন কর্মীরা ভোরে দিল্লিতে ফিরে আসেন এবং এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

১৮ মাসের আইনি লড়াই এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অবসান ঘটিয়ে সোমবার সকালে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন ৭ জন।

 মামলার মূল ঘটনাগুলির একটি দেওয়া হল :

আগস্ট ২০২২: কাতারের গোয়েন্দা সংস্থা দোহা থেকে ভারতীয় নাগরিকদের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। কাতার বা ভারত প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তোলেনি।

অক্টোবর ২০২২: কাতারি কর্তৃপক্ষ তাদের একটি সাবমেরিনে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনেছিল এবং একই মাসে তাদের জেলে পাঠানো হয়েছিল।

মার্চ ২০২৩: কাতারি আইনের অধীনে নৌবাহিনীর প্রাক্তন কর্মীদের বিচার শুরু হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অক্টোবর ২০২৩: কাতারের আদালত আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কেন্দ্রীয় সরকার, “গভীর শোক” প্রকাশ করে নিশ্চিত করেছে যে এই ভারতীয়দের সমস্ত কনস্যুলার এবং আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে।

আরও পড়ুন : ভারত সরকার মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে৷ কাতারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয়দের পরিবারের কাছে এস জয়শঙ্কর।

নভেম্বর ২০২৩: ভারত সরকার কাতারের একটি উচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করে।

নভেম্বর ১৬,২০২৩: বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি ঘোষণা করেন যে আপিল প্রক্রিয়াটির কাজ এগিয়েছে এবং সরকার কাতার থেকে একটি “ইতিবাচক ফলাফল” আশা করছে।

নভেম্বর ২৬,২০২৩: কাতারের আদালত মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ভারতের আপিল গ্রহণ করে, উল্লেখ করে যে তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে।

ডিসেম্বর ২০২৩: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১লা ডিসেম্বর দুবাইতে COP28 শীর্ষ সম্মেলনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সাথে দেখা করেন। এর পর এটি ভাবা হয়েছিল যে এই মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে কাতার কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।

ডিসেম্বর ৩, ২০২৩: প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং আল থানির সাক্ষাতের মাত্র দুই দিন পরে, কাতারে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত, কারাগারে আটজন ভারতীয়ের সাথে দেখা করার জন্য প্রথম কনস্যুলার অ্যাক্সেস পেয়েছিলেন।

ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩: কাতারের একটি আপিল আদালত আট ভারতীয় প্রবীণ সৈনিকের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে সেটা কারাদণ্ড করে।

আরও পড়ুন : ভারতের বিরাট কূটনৈতিক জয়। কাতারে ৮ ভারতীয়ের ফাঁসি পরিবর্তিত হল।

ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২৪: ভারতীয় নৌবাহিনীর আটজন প্রবীণকে দোহা মুক্তি দেয় এবং তাদের মধ্যে সাতজন ভারতে ফিরে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *