‘এক দেশ এক নির্বাচন’ এর রিপোর্ট জমা হল। আজ বৃহস্পতিবার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি সারা দেশে লোকসভা, রাজ্য বিধানসভা এবং স্থানীয় সংস্থাগুলির জন্য একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্যতার বিষয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্যানেলটি ১৮,৬২৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে জমা করেছে।
রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সাথে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ আজাদ পার্টি (ডিপিএপি) প্রধান গুলাম নবী আজাদ সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।
সম্প্রতি উচ্চ স্তরের এই কমিটি বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, সিপিআই, সিপিআই(এম), এআইএমআইএম, আরপিআই, আপনা দল সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেছে এবং মতবিনিময় করেছে। এসব দলের প্রতিনিধিরাও কমিটিতে লিখিতভাবে তাদের পরামর্শ জানিয়েছেন।
এই রিপোর্টে দেশের মধ্যে একযোগে সমস্ত নির্বাচন করার সম্ভবতার ওপরে মূল কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে-
১) প্রথম ধাপে লোকসভা, বিধানসভার ভোট একযোগে করা। দ্বিতীয় ধাপে, পরবর্তী ১০০ দিনের মধ্যে স্থানীয় সংস্থার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
২) ত্রিশঙ্কু ও অনাস্থা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে, পাঁচ বছরের বাকি মেয়াদের জন্য নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
৩) প্রথম একযোগে নির্বাচনের জন্য, সমস্ত রাজ্য বিধানসভার মেয়াদ পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়া সময়ের জন্য হতে পারে।
৪) কোবিন্দ প্যানেল একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, জনবল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য আগাম পরিকল্পনার সুপারিশ করেছে।
৫) একযোগে নির্বাচনগুলি ভোটারদের স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তি, স্বাচ্ছন্দ্য ও আস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।
৬) কমিটি ভারত সরকারের তিনটি স্তরের নির্বাচনের জন্য একক ভোটার তালিকা এবং একক ভোটারের ফটো আইডেন্টিটি কার্ড এর তাৎপর্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নীতি কার্যকরের উদ্দেশে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি তৈরী করেছিল মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার আট খণ্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্টটি রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়ার পরে শাহের দাবি, ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সুপারিশগুলি পেশ করা হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে।
বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির আশঙ্কা,পরবর্তী পর্যায়ে এই নীতিতে হেঁটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলিকে কার্যত ক্ষমতাহীন করে দিয়ে পঞ্চায়েত-পুরসভা ভোটকেও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, এখন ভারতীয় নির্বাচনী কাঠামোয় লোকসভা ভোট রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সঙ্গে হয়না বলে বিরোধী দলগুলির পক্ষে আসন সমঝোতা করা সহজ হয়।কিন্তু একই সঙ্গে বিধানসভা ভোট ও লোকসভার ভোট হলে কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগী আঞ্চলিক দলগুলির বিরোধ অনিবার্য। সেক্ষেত্রে জোট রাজনীতির সমীকরণ সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিশেষ সূত্র অনুযায়ী এটা জানা যাচ্ছে আগামী ২০২৯ সালের মে জুন মাসে প্রথমবার একযোগে লোকসভা ও বিধানসভার ভোটের পরিকল্পনা হতে পারে।