পৃথিবীর বৃহত্তম অফিস বিল্ডিং এখন ভারতে। ভারতের গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত, মুম্বাই থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে, সুরাট শহর, হীরা পালিশ ও কাটিং এর জন্য বিখ্যাত। এখানে গোটা বিশ্বে ব্যবহৃত ৯০% হীরের কাটিং ও পালিশ করা হয়। এটিকে একটি হীরে ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৭ই ডিসেম্বর গুজরাটে এই নবনির্মিত সুরাট ডায়মন্ড বোর্স ( Surat Diamond Bourse ) অফিস কমপ্লেক্সটির উদ্বোধন করবেন।
এই ব্যবসায়ী কেন্দ্রটির আয়তন ৬৫৯৬১১ বর্গ মিটার। একটি কেন্দ্রীয় স্ট্রাকচারের সঙ্গে যুক্ত আছে নটি টাওয়ার। প্রতিটি টাওয়ার ১৫ তল বিশিষ্ট। এটিকে তৈরি করতে আনুমানিক খরচা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এই বিল্ডিংটি শুধুমাত্র হীরে ব্যবসায়ীদের জন্য সংরক্ষিত। এটিতে ৪৫০০ টি হীরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে। এই ৪৫০০ টি হীরে প্রতিষ্ঠানে ৬৫ হাজার কর্মী হীরে কাটিং ও পালিশের কাজে যুক্ত থাকবেন। প্রতিটি অফিসের আয়তন ৩০০ থেকে ৭৫ হাজার বর্গফুট। অফিস বিল্ডিংটির মোট ফ্লোর স্পেস ৭১ লক্ষ বর্গফুট এবং এটি ৩৫ একর এর বেশি জমিতে তৈরি করা হয়েছে।
এখানে আধুনিক সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকবে যেমন কনফারেন্স হল, রেস্তোরাঁ, ব্যাংক ইত্যাদি। একটি জাতীয় হীরে গবেষণা ইনস্টিটিউট, একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স হল সহ এই বিষয়ের সাথে যুক্ত কাস্টম হাউসও থাকবে। এই বিল্ডিংটির বিভিন্ন তলায় পৌঁছাবার জন্য ১৩১টি লিফট এর ব্যবস্থা আছে। বোর্সের বেসমেন্টে ২০ লক্ষ বর্গফুট পার্কিং এরিয়াও রয়েছে। প্রবেশ এবং বাহির গেটে অত্যন্ত সুরক্ষিত ক্যাম্পাস নিরাপত্তা চেক পয়েন্ট, সিসিটিভি নজরদারি, কন্ট্রোল রুম, পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম এবং প্রবেশের গেটে আন্ডার কার স্ক্যানারের ব্যবস্থা থাকবে।
এই মেগাস্ট্রাকচারটির ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও কোভিড এর জন্য কাজ শেষ করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ভারতীয় স্থাপত্য সংস্থা মর্ফোজেনেসিস এই বিল্ডিংটি তৈরি করেছে। তাদের বক্তব্য এই বিল্ডিংটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যেখানে ছোট ব্যবসায়ী যেমন ব্যবসা করতে পারবেন তেমনি বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও ব্যবসা করতে কোন অসুবিধা হবে না।
আয়তনের দিক থেকে এটি এখন পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ অফিস বিল্ডিং। ১৯৪৩ সালে তৈরি হওয়া আমেরিকার সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগন কে এখনো পর্যন্ত সর্ববৃহৎ অফিস বিল্ডিং বলা হত। সুরাটের এই হীরে ব্যবসায়ী কেন্দ্র গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ সর্ববৃহৎ অফিস বিল্ডিং এর স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি পেন্টাগনের থেকে ৪০০০০ বর্গমিটার বড়।
সুরাট ডায়মন্ড বোর্স ভারতীয় স্থাপত্য সংস্থা মর্ফোজেনেসিস দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে। কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা সোনালি রাস্তোগির মতে, বিল্ডিংটি ডিজাইন এমন ভাবে করা আছে যাতে প্রবেশদ্বারগুলির যেকোনো একটি থেকে মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে সমস্ত অফিসে পৌঁছানো যায়৷
উল্লেখযোগ্যভাবে, মেগাস্ট্রাকচারটি ইন্ডিয়ান গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিল (IGBC) থেকে প্ল্যাটিনাম র্যাঙ্কিং পেয়েছে। বিল্ডিংটি শীতল করার জন্য প্রয়োজনীয় ঠান্ডা হওয়ার প্রায় ৫০% প্রাকৃতিক বায়ুচলাচলের মাধ্যমে পূরণ করা হয়,আর বাকিটা সৌরশক্তি দ্বারা।
চারটি বৃহত্তম অফিস ভবনের তালিকা
রাঙ্কিং | বিল্ডিং | শহর | দেশ | এলাকা ( বর্গ মি) | উচ্চতা ( ফুট ) | কর্মচারী |
১ | সুরাট ডায়মন্ড বোর্স | সুরাট , গুজরাট | ভারত | ৬৬০০০০ | ২৬৮ | ৬৫,০০০ |
২ | পেন্টাগন | আর্লিংটন | যুক্তরাষ্ট্র | ৬২০০০০ | ৭৭ | ২৬০০০ |
৩ | ক্রাইসলার ওয়ার্ল্ড হেডকোয়ার্টার এবং টেকনোলজি সেন্টার অবার্ন হিলস | মিশিগান | যুক্তরাষ্ট্র | ৪৯০০০০ | ২৪৯ | ১১০০০ |
৪ | এসএএস আই-টাওয়ার | হায়দ্রাবাদ | ভারত | ৪৮০০০০ | ৫৬১ |