মঙ্গলবার ইরানি সেনা পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইরান সীমান্তে প্রত্যাঘাত করে পাকিস্তান। এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবরে সাতজন ইরানি প্রাণ হারিয়েছেন।
সোমবার ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালায় ইরান। তার ঠিক একদিন পর মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, “ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন” হামলায় পাকিস্তানে বেলুচি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
কিন্তু ইরান কেন পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালাল?
জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদল কে তেহরান “ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী” বলে অভিহিত করেছে। zমূলত এরা ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে তাদের ঘাঁটি তৈরি করেছে। এখানে তারা জঙ্গি ট্রেনিং দেওয়া থেকে শুরু করে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ইরান তাদের সীমান্ত এলাকায় এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।কিন্তু পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ইরানের তরফ থেকে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
তবে পাকিস্তানে সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে ইরান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জইশ আল আদল এর আগে পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি বলেছিলেন যে পাকিস্তানের সীমান্তের নিকটবর্তী শহর রাস্কে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায় জইশ আল-আদল এর জঙ্গিরা। কমপক্ষে ১১ জন ইরানি পুলিশ এই জঙ্গি আক্রমণে নিহত হয়েছিল। জইশ আল-আদল তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে, এএফপি জানিয়েছে।
জইশ আল-আদল কি?
জইশ আল-আদল, বা “আর্মি অফ জাস্টিস” ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী যেটি মূলত পাকিস্তান থেকে কাজ করে। মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের অনুসারে, জইশ আল-আদল হল “সবচেয়ে সক্রিয় এবং প্রভাবশালী” সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী। গোষ্ঠীটি দাবি করে যে তারা সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা এবং ইরানে বেলুচ জনগণের আরও অধিকারের জন্য লড়াই করছে। বর্তমানে এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সালাহউদ্দিন ফারুকী।
তেহরান বারবার পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে যে জইশ আল-আদল জঙ্গি গোষ্ঠী বেলুচিস্তানের সীমান্ত শহর পাঞ্জগুরে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে, পিটিআই জানিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের এই লঙ্ঘন সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং এর মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।” ইসলামাবাদ জোর দিয়েছিল যে “এই ধরনের একতরফা কাজ ভাল প্রতিবেশী সম্পর্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়”। পাকিস্তান ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে এবং তেহরান থেকে তার দূতকে প্রত্যাহার করেছে ।
পাকিস্তান বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের সিস্তান-ও-বেলুচিস্তানে প্রতিশোধমূলক সামরিক হামলা চালায়। ইরান পাকিস্তানের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর দুই দিন পর এই হামলা হলো। এএফপি জানিয়েছে, ইরানের সারাভান শহরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এটি ১৯৮০-১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইরানের অভ্যন্তরে প্রথম হামলা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাকিস্তান জানিয়েছে ” বেশ কয়েক বছর আগে থেকে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সন্ত্রাসী যারা নিজেদেরকে ‘সরমাচার’ বলে অভিহিত করে তারা ইরানের অভ্যন্তরে ইরানের নিয়ন্ত্রণহীন স্থানগুলিতে নিরাপদ আশ্রয় তৈরী করেছে এবং সেখান থেকে পাকিস্তান বিরোধী কার্য কলাপ সংঘটিত করছে। এর সম্পর্কে পাকিস্তান গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ও পাকিস্তান এই সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি এবং কার্যকলাপের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সহ একাধিক ডসিয়ার ইরানকে দিয়েছে।