টাটা গোষ্ঠী জানিয়েছে সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা বন্ধের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল টাটা মোটরসকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। তাদের দাবি, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১১ শতাংশ হারে রাজ্য সরকারকে সুদও দিতে হবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন , সরকারের তরফে এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আইনি পথ খোলা আছে।
২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় বসার পরে সিঙ্গুরে ন্যানো প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। টাটা গোষ্ঠীর পছন্দ মতো সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে রাজ্য সরকার। জমির মালিকদের মধ্যে অনেকেই জমি দিতে অস্বীকার করে, এবং আন্দোলন শুরু করে।সেই অনিচ্ছুক চাষিদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনের গভীরতাকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয় সেই সময়কার বিরোধী দল তৃণমূল। শুরু হয় ধর্ণা আন্দোলন। ধারাবাহিক সেই আন্দোলনের জেরে অনেক টানাপড়েনের পর রতন টাটা ঘোষণা করেন তাদের ন্যানো প্রকল্প তিনি এখন থেকে তুলে নিচ্ছেন ।
তার পরেই নির্বাচনে বাম সরকারের পতন ঘটে। ২০১১ সালে এই সিঙ্গুর আন্দোলনই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের মসনদে বসার পথ প্রশস্ত করেছিল। রাজ্যে সরকার গড়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ১৫৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ চেয়েছিল টাটা মোটর। কারণ সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের জন্য বাম সরকারকে সেই পরিমাণ টাকা দিয়েছিল তারা। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট মমতা সরকারের পক্ষে রায় দিয়ে জানিয়েছিল বাম আমলে জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতি অবৈধ ছিল। টাটারা সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি মধ্যস্থকারী প্যানেলের সহায়তা চেয়েছিল।
সেই প্যালেনই মমতা সরকারকে কমপক্ষে ৭৬৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ টাটা মোটরসকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এবং এটাও বলেছে ২০১৬ সাল থেকে ১১ শতাংশ হারে সুদও দিতে হবে। ২০১৬ সাল থেকে ইতিমধ্যে ৭ বছর অতিক্রান্ত। এই সাত বছরে সহজ ১১ শতাংশ হারে সুদ ধরলে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দাঁড়ায় ১৩৫৫ কোটি টাকা। রাজ্য সরকার যতক্ষণ না ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ততক্ষণ এই সুদ গুণে যেতে হবে।
টাটা যে ট্রাইবুনালে জিতেছে তা তারাই স্টক এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে জানিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ট্রাইবুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মত ভাবে তাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। টাটা মোটরস লিমিটেড (Tata Motors Limited -TML) এবং পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের (West Bengal Industrial Development Corporation Limited – WBIDC) মধ্যে এই মামলা চলছিল। টাটার বক্তব্য ছিল, সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা তৈরি করতে গিয়ে তাদের মূলধন খাতে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির দায় রাজ্য সরকারের।
এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এই বিপুল অংকের টাকা পরিশোধ করা কতটা কঠিন হবে রাজ্য সরকারের কাছে সেটা বলে বোঝাবার আর অবকাশ থাকে না।