মহিলা নন। মাথায় ঘোমটা টেনে পুরুষ সদস্যেরাই মহিলা সেজে বরণ করেন মা জগদ্ধাত্রীকে। শুনেই চমকে যাচ্ছেন তাই না! এটি ঘটে হুগলি জেলায়। প্রাচীন রীতি মেনেই ভদ্রেশ্বরে তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী মা এর পুজোয় প্রতিমা নিরঞ্জন পর্ব শুরু হয়।
জানা গেছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে তাঁর দেওয়ান ছিল দাতারাম সুর। সে ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি অঞ্চলে বসবাস করতো। সেসময় কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে খুবই ধুমধাম করে মা জগদ্ধাত্রীর পুজো হত। সেই পুজো দেখে দেওয়ানের বিধবা কন্যার জগদ্ধাত্রী পুজো কারার ইচ্ছা হয় এবং সে পুজোর সূচনা করে গৌরহাটি অঞ্চলে। পরবর্তী কালে গৌরহাটি অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারাই পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়।
ইংরেজদের সেনাছাউনি ছিল ভদ্রেশ্বর গৌরহাটি এলাকায়। গোরা সেনারা পুরো এলাকা জুড়ে ঘুরে বেড়াতো। পরপুরুষ, বিশেষত গোরা সৈন্যদের সামনে বাড়ির মেয়েদের বাইরে বেরোনোর অনুমতি ছিল না। তাই তাদের অন্দরমহলেই থাকার বিধান ছিল। এই পরিস্থিতিতে মা এর বিসর্জনের আগে মাকে বরণ কারার প্রথা তাহলে কিভাবে সম্পর্ণ হবে? তাই সেই সময়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর আচার-অনুষ্ঠান পুরুষদেরই করতে হবে বলে ঠিক হয়।
বাড়ির মহিলারা যে ভাবে বাড়ির ঠাকুরকে বরণ করে, ঠিক সে ভাবেই পুরুষদের শেখানো হয় বরণ করা। পুরুষরা মহিলাদের মতো শাড়ী পড়ে মা কে বরণ করতো। সেই পুরনো রেওয়াজ অনুসরণ করে আজও মহিলাদের মতোই শাড়ি পরে, মাথায় সিঁদুর লাগিয়ে, পুরুষ সদস্যেরা বরণডালা নিয়ে জগদ্ধাত্রী প্রতিমাকে বরণ করে। তার পর শোভাযাত্রা বার করে প্রতি বছর গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়।
প্রতি বছরই বাসুদেব মুখোপাধ্যায় এই বরণে মহিলার বেশে অংশ নেন। তিনি বলেন, “সারা বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। বেশ ভাল লাগে জগদ্ধাত্রী মাকে বরণ করতে। ২৩১ বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে। এই বছর আমরা মোট ১৫ জন মাকে বরণ করেছি ।” পুজোর বয়সের নিরিখে তেঁতুলতলার পুজো তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তাই স্থানীয়রা এখানকার জগদ্ধাত্রী মা কে ‘সেজ মা’ বলে থাকেন।
চলতি বছরে দেবী মূর্তি সেজেছে ১৮০ টিরও বেশি বেনারসিতে। সঙ্গে রয়েছে বহু তাঁতের শাড়ি। (ফেসবুকে দেওয়া তথ্যে ‘গৌড়হাটি তেঁতুলতলা জগদ্ধাত্রী পুজো’ জানিয়েছে, দেবী মূর্তির পরণে ১৮৯ টি বেনারসি ও ২৫ টি তাঁতের শাড়ি রয়েছে )