কলকাতা হাই কোর্টে মেডিক্যালে ভর্তি মামলার সব প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, সোমবার মামলার শুনানি হবে। তার আগে পর্যন্ত এই মামলার সব বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করা হল।
মেডিক্যালে ভর্তির একটি জাল সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্ত দেয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । রায়দানের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ সেটিকে মুলতবি করে দেয়। এরপরে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। দুটি বেঞ্চের মধ্যে ২৪ ও ২৫ জানুয়ারী পরস্পর পরস্পরের আদেশে একে অপরকে তিরস্কার করে।
শীর্ষ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করে। জরুরি ভিত্তিতে শনিবার ছুটির দিনে বিশেষ বেঞ্চ বসে। বেঞ্চে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু। বিচারপতি সূূর্যকান্ত ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টে শনিবার রাজ্যের পক্ষ থেকে ছিলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বনাম বিচারপতি সৌমেন সেনের দ্বন্দ কি?
- বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এমবিবিএস পরীক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে এই মর্মে ইতিশা সরেনের করা মামলায় তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
- পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায়। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ তখন সিবিআই তদন্তের সিঙ্গেল বেঞ্চের আদেশ স্থগিত করে দেয়। পরে সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআর খারিজ করে দেয়।
- বৃহস্পতিবার, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ বলেছিল যে ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া আদেশটি সম্পূর্ণ বেআইনি।
- এর পরেই ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশের প্রক্রিয়াগত ‘ত্রুটি’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি তাঁর নির্দেশনামায় বিচারপতি সেন সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ করেন। বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা-ও কার্যকর হবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। অর্থাৎ, এই মামলায় সিবিআইকে তিনি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে বলেন।
- বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশনামায় বিচারপতি সেন সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছেন।
- বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশনামায় উল্লেখ করেছিলেন, বড়দিনের ছুটির আগে বিচারপতি সান্তনু সেন তাঁর চেম্বারে বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে ডেকে পাঠান। সেখানে তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো বিচারপতি সিনহাকে নির্দেশ দেন। নির্দেশে বিচারপতি সেন বলেন,
১) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাঁকে বিরক্ত করা চলবে না।
২) বিচারপতি সিনহার এজলাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর মামলার সময় ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বন্ধ করতে হবে।
৩) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির যে দু’টি মামলা আছে তা খারিজ করতে হবে।
- বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, বিচারপতি সেন ব্যক্তিগত স্বার্থে ওই সব নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুই বিচারপতির মধ্যে এই অপ্রত্যাশিত দ্বন্দ দেখা দেওয়ার পর, বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্চ থেকে শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতে হাইকোর্ট নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেয়, আগামী সোমবার থেকে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে অন্য ডিভিশন বেঞ্চে। এরপরই আজ সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত মামলা সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করে দিল।