ইন্দিরা গান্ধী কখন ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ রীতি ভেঙে দেন? দিনটা ছিল ২৭শে ডিসেম্বর, ১৯৭০-এর রাত, ঘরে ঘরে রেডিও বেজে উঠলো। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ শুরু করলেন। সেই ঠান্ডার রাতে ইন্দিরা গান্ধী যা ঘোষণা করেছিলেন তা কয়েক দশকের ভারতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিবর্তিত করে দেয়।
ইন্দিরা গান্ধী সেদিন বলেছিলেন “বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমরা আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছিনা এবং জনগণের কাছে আমাদের করা অঙ্গীকার পুরণে আমরা ব্যর্থ ।” প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ মাস আগে ভেঙে যায় লোকসভা। স্বাধীন ভারতে এই প্রথম লোকসভার মেয়াদ পুরো হবার আগে তাকে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
ইন্দিরা তার ভাষণে বলেছিলেন, “আমরা কেবল ক্ষমতায় থাকা নিয়েই উদ্বিগ্ন নই বরং আমাদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।”
কংগ্রেস থেকে বেড়িয়ে এসে ইন্দিরা গান্ধী ডিএমকে সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দলের সমর্থনে একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করেন এবং ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শুধু মাত্র ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্যে তিনি লোকসভা ভেঙ্গে নতুন সরকার গঠন করেন।
লোকসভার নিদিষ্ট সময় কালের ১৫ মাস আগে সাধারণ নির্বাচন সংগঠিত করানোর ইন্দিরার সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সংসদীয় নির্বাচন থেকে রাজ্য নির্বাচনগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর আগে পর্যন্ত ভারতে সংসদীয় ও বিধানসভা নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হতো।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে বর্তমান সরকার, পাঁচ দশক পর, ভারতে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারণা পুনরুজ্জীবিত করেছে।
শাসনের বিভ্রান্তি, নৈতিক আচরণবিধির প্রভাব, নির্বাচনী ব্যয় এবং সংসদ কেনাবেচা হ্রাসের উদ্দেশ্যে সরকার ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ এর বিষয়ে বিবেচনা করছে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি উচ্চ-স্তরের কমিটি ২০২৯ সালের লোকসভা, সমস্ত রাজ্য বিধানসভা এবং স্থানীয় সংস্থাগুলির নির্বাচন একযোগে করার জন্য সংবিধান এবং নির্বাচন-সম্পর্কিত আইন সংশোধন করার সুপারিশ করেছে।
আরও পড়ুন : ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ এর রিপোর্ট জমা হল। রাম নাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের শীর্ষ ৬ টি সুপারিশ।
ইন্দিরার পদাঙ্ক অনুসরণ করা দল কংগ্রেস মোদী সরকারের এই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।
কিন্তু ঠিক কী কারণে ইন্দিরা গান্ধী সাধারণ নির্বাচনকে ১৫ মাস এগিয়ে নিয়েছিলেন, এবং যখন নির্বাচন একই সাথে অনুষ্ঠিত হত তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল?
১৯৫১-৫২ সালে প্রথম ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ হয়
ইন্দিরা গান্ধী যদি ১৯৭০ সালে লোকসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ না করতেন এবং আগাম সাধারণ নির্বাচনের আহ্বান না জানাতেন, তাহলে লোকসভার নির্বাচন ১৯৭২ সালে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের সাথে একযোগে হত ।
যদি কেউ প্রজাতন্ত্রের প্রাথমিক দিনগুলিতে ফিরে যায়, তবে ১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে ভারতের সংবিধান কার্যকর হওয়ার পরে, ১৯৫১-৫২ সালের শীতকালে প্রথম নির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচন প্রকৃতপক্ষে ‘এক দেশ , এক নির্বাচন’-এর একটি চমৎকার নিদর্শন ছিল। এটি ছিল প্রথম নির্বাচন, এবং এটি উভয় স্তরের সরকার গঠনের জন্য একসাথে পরিচালনা করা হয়েছিল।
১৯৫১-৫২ সালে যে একযোগে লোকসভা বিধানসভার নির্বাচন শুরু হয়েছিল তা প্রায় দুই দশক ধরে একই রীতিতে চলছিল। ১৯৭০ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অকাল নির্বাচনের আগে পর্যন্ত লোকসভা এবং বিধানসভাগুলি তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ একসাথে শুরু ও শেষ করতো।
ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি ও ক্ষমতার লোভে সেদিনের ইন্দিরা গান্ধীর দ্বারা অকাল লোকসভা নির্বাচন আজকের অনেক জটিল কারণ এবং পরিস্থিতির জন্য দায়ী।