তৃণমূল,বিজেপি ও বামফ্রন্ট বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। হাওয়ার খবর কি? কার পক্ষে কার বিপক্ষে। আপনার কেন্দ্রের প্রার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিন।
কীর্তি আজাদ
কীর্তিবর্ধন ভাগবত ঝা আজাদ একজন রাজনীতিবিদ এবং প্রাক্তন ক্রিকেটার। আজাদ বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভাগবত ঝা আজাদের ছেলে।
তিনি ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবন
কীর্তি আজাদ ১৯৯০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য ছিলেন। বিহারের দারভাঙ্গা থেকে বিজেপির হয়ে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, আজাদ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ধানবাদ কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী পশুপতি নাথ সিং-এর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নিবার্চনে কীর্তি আজাদ ৪.৮ লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এর পর ২৩শে নভেম্বর, ২০২১-এ দিল্লিতে টিএমসি সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বৈঠকের পর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। ৫ই মার্চ ২০২২ সালে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের গোয়ার ইনচার্জ হন।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কীর্তি আজাদ তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন।
- ১৯৯০ থেকে ২০১৯ – ভারতীয় জনতা পার্টি।
- ২০২৯ থেকে ২০২১ – ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।
- ২০২১ থেকে বর্তমান – তৃণমূল কংগ্রেস।
পক্ষে – বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক ক্ষমতা খুব ভালো। এই লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬ টি তৃণমূলের দখলে।
বিপক্ষে – এই লোকসভা কেন্দ্রের বেশিরভাগ এলাকা গ্রামীণ। তাই ভোট প্রচারের সময় বাংলা ভাষা না জানায় তিনি কিছুটা বিরাম্বনায় পড়তে পারেন। সামগ্রিকভাবে রাজ্যের বিভিন্ন দুর্নীতি ইভিএমে সাধারণ মানুষের রায় তাঁর বিপক্ষে যেতে পারে।
আরও পড়ুন : আপনার লোকসভা কেন্দ্র কি বর্ধমান- দুর্গাপুর? জেনে নিন এই লোকসভা কেন্দ্রের খুঁটিনাটি।
দিলীপ ঘোষ
দিলীপ ঘোষ একজন রাজনীতিবিদ । তিনি গত লোকসভায় মেদিনীপুর কেন্দ্রের সংসদ সদস্য । ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি ও ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম জাতীয় সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এবার বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী।
রাজনৈতিক জীবন
দিলীপ ঘোষ ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর স্বেচ্ছাসেবক বা “প্রচারক” হিসাবে তার যাত্রা শুরু করেন। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে আরএসএস-এর ইনচার্জ ছিলেন। ২০১৪ সালে, তাঁকে আরএসএস থেকে বিজেপির দায়িত্বে পাঠানো হয়। প্রথমে তিনি পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে ২০১৫ সালে, তাঁকে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালে খড়্গপুর সদর থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়যুক্ত হন।
তাঁর নেতৃত্বে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে মধ্যে ৪০.২৫% ভোট পেয়ে ১৮টি লোকসভা আসন জিতেছিল। তিনি নিজে ঐ নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুনিয়াকে পরাজিত করে ৮৮৯৫২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন।
পক্ষে – তাঁর হার না মানা মানসিকতা সব সময় তাঁর পক্ষে গেছে। এই আসনে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়েছিল।
বিপক্ষে – এই লোকসভা আসনে বিজেপি সাংগঠনিক দিক থেকে প্রচন্ড দুর্বল। পুরনো বিজেপি কার্যকর্তাদের বেশিরভাগই আজ অন্তরালে। এই উদাসীনতাই বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
সুকৃতি ঘোষাল
সুকৃতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করেন। কর্মজীবন শুরু করেন হুগলির রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে পরে হাওড়ার বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজে শিক্ষকতা করেন। ২০০২ সালে বর্ধমানের মহারাজাধিরাজ উদয়চাঁদ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালে স্বেচ্ছা অবসর নেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের প্রার্থী।
রাজনৈতিক জীবন
ছাত্রাবস্থায় এসএফআই করেছেন। কর্মজীবনে কলেজ শিক্ষকদের বাম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পক্ষে – সুকৃতি ঘোষাল আদ্যোপান্ত বাঙালি ভদ্রলোক। তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ভোট বাক্সে তার পক্ষে যাবে।
বিপক্ষে – দীর্ঘ সময়ের বাম আমলের পতনের পর এই লোকসভা কেন্দ্রে গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ১১.২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সিপিএম এই ভোটের শতাংশে কতটা বৃদ্ধি করাতে পারবে তাই এবার দেখার। অন্যদিকে সিপিএমের জোট সঙ্গী কংগ্রেস এবার এই লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে বলে ভেবেছিল। আচমকা বামফ্রন্টের তরফ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করায় কংগ্রেসীরা নারাজ।