হঠাৎই এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের সামনে এসে পৌঁছয় ইএসআই হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স। হাসপাতালের সামনে মোতায়েন করা হয় বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী। একে একে ইডি আধিকারিকেরা সেখানে পৌঁছান। আন্দাজ করা গিয়েছিল বড় কিছু হতে চলেছে কারণ এখানেই ‘খুবই অসুস্থ’ ‘‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের চিকিৎসা চলছে গত ৫ মাস থেকে। তাহলে কি এবার ‘কাকু’ কে এসএসকেএম থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হতে পারে এই প্রশ্ন বারবার ঘোরা ফেরা করছিলো সেখানে উপস্থিত লোকজনের মনে ।
প্রশ্নর উত্তর পাওয়া যায় একটু পরেই। দেখা যায়, এসএসকেএমের হৃদ্রোগ বিভাগের কেবিন থেকে বার করা হয়েছে সুজয়কে। খয়েরি রঙের চাদর মুড়ি দিয়ে ছিলেন ‘কালীঘাটের কাকু’। মুখে মাস্ক। হুইলচেয়ারে করে তাঁকে বার করে সোজা তোলা হয় দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সে। কঠিন রোগে অসুস্থ ‘কাকু’ বেরোনোর সময়ে কোনও কথা বলেননি। কঠিন পাহারায় ‘কাকু’ কে ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী আসে পাশে ঘেঁষতে দেয়নি কাউকে। ইএসআই হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে বার করে আবার হুইলচেয়ারে তোলা হয় ‘কাকু’কে।
গত ৩০ মে ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করে ইডি। তার পরের দিন তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করে ইডি। আদালতে ইডি জানায় , নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল সুজয়ের ফোনে। সুজয়ের কথায় সেগুলি ফোন থেকে মুছে দেয় সিভিক ভলান্টিয়ার রাহুল বেরা। কিন্তু তাদের কাছে এই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘কল রেকর্ডিং’ আছে বলে ইডি সূত্রে দাবি করা হয়।
সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র বুকে ব্যথার অভিযোগ করার পরে ২২ শে আগস্ট এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ১নম্বর এসি কেবিনে ভর্তি করা হয়েছিল।তার পর থেকেই ‘কালীঘাটের কাকু’র স্থায়ী চিকিৎসালয় এসএসকেএম। তদন্তের স্বার্থে ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে চাইছিল ইডি। এসএসকেএম এর চিকিৎসকরা ‘কাকু’ কে নমুনা সংগ্রহের জন্য ‘শারীরিকভাবে অসুস্থ’ ঘোষণা করে বারবার। তাই আদালতের নির্দেশের পরেও সংগ্রহ করা যায়নি নমুনা।
বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার রুদ্ধদ্বার শুনানি করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ । এই মামলায় মঙ্গলবার তলব করার পর বুধবার বিচারপতির সামনে রুদ্ধদ্বার শুনানিতে হাজির হন ইডির যুগ্ম ডিরেক্টর এবং ইএসআইয়ের মেডিক্যাল দলের প্রধান।
ইএসআই হাসপাতালে ‘কাকু’র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলে তাকে ‘সম্পূর্ণ সুস্থ’ বলেন জোকা ইএসআইয়ের মেডিক্যাল টিম। ‘সম্পূর্ণ সুস্থ’ নিশ্চিত করার পর একটু রাতের দিকে কালীঘাটের কাকুকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ইকো-প্রুফ রুমে কাঁচের ঘরে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে ‘কালীঘাটের কাকু’কে কিছু শব্দ বারবার বলতে বলা হয়। তিনি সেগুলি বলতে অস্বীকার করেন। তারপর মনোরোগ চিকিৎসকের কিছুক্ষণ প্রচেষ্টার পর সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র সেই শব্দগুলি তিনি বলেন ও ইডি তার কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।
কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের পর রাত ৩টে ২০ নাগাদ সুজয়কৃষ্ণকে ফের ইএসআই হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে ফিরিয়ে আনা হয়।
ভয়েস নমুনা কিভাবে নেওয়া হয়?
পদ্ধতি:
- ১) একজন ব্যক্তির কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিতে তদন্তকারী সংস্থা আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালতের অনুমতি পেলে নিয়ন্ত্রিত এবং শব্দমুক্ত পরিবেশের জন্য ইকো-প্রুফ রুমে নমুনা নেওয়া হয় ।
- ২) নমুনা রেকর্ড করতে একটি উন্নত মানের ভয়েস রেকর্ডার ব্যবহার করা হয় যেখানে প্রমাণের অংশ হিসাবে নেওয়া বিবৃতি থেকে একটি নির্দিষ্ট ‘ক্লু’ শব্দ বলতে বলা হয়।
ভারতীয় ফরেনসিক ল্যাবে ভয়েস স্যাম্পলিং এর পরীক্ষায় সেমি-অটোমেটিক স্পেকট্রোগ্রাফিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ওষুধের প্রভাবে ব্যক্তির কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হলে বা ব্যক্তি সর্দিতে ভুগলে নমুনা অনেক সময় ভুল রেজাল্ট দেয়। নমুনার বিশ্বাসযোগ্যতা বিশেষজ্ঞের দ্বারা ব্যবহৃত কৌশল এবং আদালত কীভাবে এটি বিশ্লেষণ করে তার উপর নির্ভর করে ।